প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( জামালপুর ) : শাক সিদ্ধ,আলু পোড়া আর ফেনভাত খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন জামালপুরে আটকে পড়া পুরুলিয়ার ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক ।লকডাউন ঘোষনা হতেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মনিব ।পাশে দাঁড়ায়নি পঞ্চায়েতের বাবুরাও। এই পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়ে গিয়েছেন সুদূর পুরুলিয়ার গ্রাম থেকে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানা এলাকায় কাজ করতে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা।শাক সিদ্ধ ,আলু পোড়া আর ফেন ভাত একবেলা খেয়েই এখন তাঁরা কোন রকমে দিন কাটাচ্ছেন।এমন কষ্টের জীবন থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্য পুরুলিয়ার পরিযায়ী শ্রমিকরা সকলের কিছে করজোড়ে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেবার আবেদন জানিয়ে চলেছেন । পুরুলিয়ার বড়ো থানার শিনটুনি গ্রামে বাড়ি পরিযায়ী শ্রমিকদের।বরো ধান রোয়া ও আলু চাষের কাজ করার জন্য গত মাঘ মাসে ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক চলে আসেন জামালপুর থানা এলাকায়। শ্রমিকদের বেশিরভাগ জনই মহিলা।দুটি শিশু তাঁদের সঙ্গে রয়েছে।ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ১২ জন রয়েছেন আবুজহাটি ১ পঞ্চায়েতের বেজপুকুর পাড় এলাকায় । বাকি ৬ শ্রমিক রয়েছেন পাড়াতল ২ পঞ্চায়েতের বেজলা গ্রামে । নিদারুন কষ্টের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা এখন দুই গ্রামের মনিব প্রহ্লাদ হাঁসদা ও শেখ সিরাজের খামারেরই দিন কাটাচ্ছেন । পরিযায়ী শ্রমিক সরলা হাঁসদা ,শান্তিমনি মুর্মু প্রমুখরা বলেন ,ক্ষেত মজুরির কাজকরে কিছু অর্থ রোজগারের জন্য তাঁরা গত মাঘ মাসে জামালপুরের মনিবের বাড়িতে আসেন।বরো ধান রোয়া ও আলু চাষের সব কাজ শেষও হয়েগেছে ।বাড়ি রওনা হবার প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন ।তারই মধ্যে লকডাউন ঘোষনা হয়েযেতেই তাঁরা চরম বিপাকে পড়ে যান ।শান্তিমনি মুর্মু জানান ,ক্ষেত মজুরির কাজ করে যে কটা টাকা রোজগার হয়েছিল তা এই কদিন বসে বসে খেয়েই শেষ হয়েগেছে । এখন খিদে মেটানোর জন্য অন্ন জোগাড় করাই দায় হয়ে পেড়েছে। পুরুলিয়ার বাড়িতে থাকা সন্তনরাও সমস্যায় পড়েগিয়ে শুধুই কান্নাকাটি করে চলেছে । সরলা হাঁসদা জানালেন,এই কঠিন পরিস্থিতিতে কিছু খাদ্য সামগ্রী পাওয়া ও বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দেবার আবেদন নিয়ে তাঁরা এখানকার স্থানীয় পঞ্চায়েতে দরবার করেছিলেন।কিন্তু পঞ্চায়েতের বাবুরা তাঁদের আবেদন গ্রাহ্য না করে ফিরিয়ে দেন । দুই মনিবও এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ।এমন অসহায় পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পুকুরপাড় থেকে তুলে আনা শাক সিদ্ধকরে ,আলুপোড়া আর সামান্য চাল দিয়ে ফেনে ভাত রান্নাকরে একবেলা খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে বলে শান্তিমনি জানালেন ।এদিকে দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত রাড়ানোর কথা মঙ্গলবার ঘোষনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খাদ্য সামগ্রী না পাওয়া গেলে লকডাউনের বাকি এতগুলো দিন কিভাবে কাটাবেন তার কোন কুলকিনারা করে উঠতে পারছেন এই পরিযায়ী শ্রমিকরা।
এই বিষয়ে জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন ,পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহায়তার কথা কেউ জানায়নি। তবে বিডিও জানিয়ে দিয়েছেন ,’ওই শ্রমিকদের কাউকে যাতে অভুক্ত থাকতে না হয় তার জন্য যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়া হবে । ’